Home প্রচ্ছদ ত্রান বিতরনে এক রাত

ত্রান বিতরনে এক রাত

ত্রান বিতরনে এক রাত

দুপুরের দিকে একটা টেলিফোনে আসে। সন্ধে নামার সাথে সাথে ইফতার করে বিশেষ কাজে নিয়োজিত হতে হবে।
প্রায় ছয়মাস পর যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশ পাই।
,ইফতারের পর আধা ঘন্টার মধ্যে প্রস্তুতি,অদৃশ্য নির্দেশ, কোন ভাবেই প্রস্তুতি নাই।৭.৩০ মিনিটের মধ্যে পৌছে গেলাম নির্দেশিত স্থানে, দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হল, প্রয়োজনীয় কাগজ,কলম নির্দেশনা হাতে পৌছে গেল।নির্দেশের বাইরে কারো সাথে কোন কথা নাই। আমি নবিন,অনবিজ্ঞ প্রচুর মানষিক চাপ, আমি এতবড় প্রসার নিতে পারবো? গন্তব্যে রওয়ানা,ব্যাক্তিগত মটর সাইকেলে আমি ছয়জন দায়িত্ব প্রাপ্ত সৈনিক, সহযোগী বা কর্মী প্রায় বিশ জন কেউ কারো সাথে পরিচয় নাই, কেউ যানে না স্পটে কে কার সাথে যাচ্ছে। সবাই নির্দেশিত স্পটে পৌছে গেলাম।স্পটে দেখা হল একদল ভলান্টিয়ারস্ দের সাথে। সিনিয়র জুনিয়র সম্মিলিত। সবাই কমিটেড, সবাই যার যার দ্বায়িত্ব নিয়ে পরিচয় দিয়ে প্রফেশনাল এপ্রোচে কতা বলা শুরু হল। দুই ট্রাক ত্রান সামগ্রী এসে পৌঁছল, স্ট্রিট লাইট আধ আলো আধ অন্ধকার কিছু মানুষ আসা শুরু করলো, বুঝে উঠতে পারছি না কি হবে,কারো সাথে চেনা পরিচয় নাই, ধনী,দরিদ্র,কর্মহীন, মিসকিন,আবাল বৃদ্ধ। মানুষ এগিয়ে আসছে।ভয়ে আমার গাঁ ছমছম করছে। অন্ধকারে অন্য প্রানীর মত আলো আঁধারে চোখ জ্বলছে। চোখে প্রশ্ন,জিগহাংসা,ক্ষুদা,( করোনা ভাইরাস) প্রতিকূলতা।মহিলাদের কিচির মিচির গুঞ্জন আচতে আচতে বাড়ছে। আমার হাতে এলো একটি তালিকা,যাতে রয়েছে একটি পরিচ্ছন্ন ভাবে নাম, মোবাইল নম্বর, ওয়ার্ড, এলাকা, বা মেইলিঁং এড্রেস, লিষ্ট দেখলেই বোঝা যায় এর আগেই একটি টিম রেকি করে অনেক কষ্ট করে এটি তৈরি করেছে। এর মধ্যে এলান আসলো লিস্ট অনুযায়ী মুটোফোনে লিষ্টে দেয়া মোবাইল নম্বরে আমার ব্যাক্তিগত মুঠোফোন দিয়ে প্রত্যেককে টেলিফোন দিতে হবে। নগর পিতা কর্তৃক মানবতার সেবায় করোনা সংক্রান্ত পরিস্থিতিতে উপহার সরূপ খাদ্য সামগ্রী দেয়া হবে আপনি আপনার বাসার থাকবেন আমরা আপনার বাসায় পৌছে দেব উপহার সামগ্রী ।

ত্রান বিতরন প্রক্রিয়ার, উপস্থাপন প্রক্রিয়া,শব্দ চয়ন আমার কানে আশায় আমি অভিভূত, আমি মুগ্ধ। আমার কাছে দেয়া লিস্ট অনুযায়ী মুঠোফোনে কল দেই কেউ ভাল ভাবে নেয়, কেউ পরিচয় দিতে অস্বিকার করে, কেন পরিচয় দেব ইত্যাদি ইত্যাদি, আমার মোবাইল ব্যাবহারের অভিজ্ঞতা হচ্ছে অধিকাংশ মানুষ এখনও টেলিফোনে রেস্পেক্টিভ এ্যাপরোচ, ম্যাসেজ গ্রহন, ম্যাসেজ পরা, ভালটি গ্রহন করা, বাকিগুলো ডিলেট করা এভাবে আমরা গড়ে উঠে নাই। আমি এক কথা পাচঁ বার বলার পর ভাল ভাবে গ্রহন করেছে। তবে আমার মনে হচ্ছিল সরাসরি যদি বলা যেত আপনার ত্রান আইছে আউগ্গাইয়া লইয়া যান, তাহলে তাদের ভাষায় সঠিক হত মনে হয়, নির্দেশনা অনু্যায়ী উপহার সামগ্রী শব্দ তাদেরকে নতুন শব্দ,অপরিচিত শব্দ, বেমানান শব্দ হিসেবে গ্রহন করেছেন। ক্রান্তিকালে সম্মান সুচক শব্দ উচ্চরন করতে পেরে আমার ভাল লাগছিল। এক যুবতি গোত্র নেত্রী বার বার নিজেকে জাহির করার চেস্টা করছিল,তিনিই তাদের নাম দিয়েছে বলেই আজ তারা ফল পাচ্ছে, পরে যানা গেল সেই নেত্রী অন্য ওয়ার্ডের লোক এবং তার পছন্দের মানুষগুলোকে একই পরিবারের একাধিক নাম ব্যবহার করেছে। আমি বুজে উঠার আগেই অদৃশ্য নির্দেশ আসে এই লিস্ট বাতিল, দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গন প্রত্যেক ঘরে গিয়ে নিজ হাতে ন্যাশনাল আইডি নম্বর, মোবাইল নম্বর, স্বাক্ষর নিয়ে পাচঁ স্তরের পর্যবেক্ষন সহ পৌছে দেয়া হচ্ছে। আমি একটু চিন্তায় পরলাম এটা কিভাবে সম্ভব মুহূর্তের সৃষ্টি জটিলতা মুহুর্তে ই ইথরে গেল সুষ্ঠু সমাধান চলে আসলো, আমি আরো নরেচরে হিসেব করে কাজ শুরু করলাম,যানতে চেষ্টা করলাম বিগত দিনগুলোর কাজের পদ্বতি,পর্যবেক্ষণ পদ্বতি। একজন আমার হাতে কিছু টাকা দিলো দুজন কে মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড করার জন্য নির্দেশনা অনুযায়ী। ভালই লাগলো আমার ব্যাক্তিগত কল খরচ থেকে বেচেঁ গেলাম, এই পদ্বতি ও ভালই লাগলো। এখন মোবাইলে কথা বলতে বিরক্ত লাগছে না, বুঝতে চেষ্টা করলাম এখন বিরক্ত লাগছে না কেন,? অনুভব করলাম এখন কথা বলছি তাঁর টাকায় তাই।
ঘরে ঘরে পৌছে দেয়া হচ্ছে করোনা দুর্যোগ কালীন উপহার সামগ্রী। কিছুক্ষন পর পর কেউ এসে ছবি তুলে মনিটরিং সেলে পাঠাচ্ছে সংগতি অসংগতি পর্যবেক্ষণের জন্য। আরো নরেচরে বোঝার চেস্টা করলাম ডিজিটাল মনিটরিং হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, জনপ্রতিনিধি,ছাত্রলীগ, আমাদের সোস্যাল ডিস্টেন্স রক্ষা করে পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। সাথে রয়েছে পুলিশ সম্ভবত চার জন।সবাই সবাইকে পর্যবেক্ষণ করছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী ‘রা নির্দেশনা পেলেই ঘরে পৌছে দিচ্ছে ত্রান সামগ্রী। কাজ করে মজা পাচ্ছি, মনের সঙ্কা কেটে গেছে।সাহসী হলাম উদ্যোগী হয়ে কাজ করার। টানা সেহেরী পর্যন্ত কাজ করলাম মেশিনের মত।

মাননীয় মেয়র মহোদয়ের রাতের এই সাহায্য/ত্রান দেয়ার প্রক্রিয়ার সাথে দুর থেকে দ্বিমত অনুভব করেছি,অনুভব করেছি সাড়া রাত যে মানুষ গুলো দিনের পর দিন মাস পার করে পঞ্চাশ হাজারের উর্দ্ধে অসহায়,কর্মহীন,গরিব মানুষের মাঝে ত্রান বিতরন করছে তাদের স্বাস্থ্য কতখানি ঝুকির মধ্যে ছিল, নিদ্রাহীন ক্ষুদার্থ কর্মকর্তা, কর্মী গন ত্রান বিতরন করছে ক্ষুদার্ত মানুষের মাঝে। আপনারা কি কেউ অনুভব করেছেন মাননীয় মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে ঝাপিয়ে পরেছে মনের চাহিদায়, চাকরির বিবেচনায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সারা রাত কাজ করা। এ সমাজের মানুষ যখন হাত ধোয়া নিয়ে ব্যস্ত, মাস্ক, PPE ক্রয়/ সংগ্রহ নিয়ে ব্যাস্ত তখন একদল মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে আর্তমানবতার সেবায়/ নির্দেশ পালন করে। যখন মানুষের করোনা ভাইরাস সনাক্ত কিটস্ নিয়ে বাকবিতন্ডায় ব্যস্ত, তখন কোন নিরাপত্তা ছাড়াই রাতের পর রাত কাজ করছে মেয়র মহোদয়ের নির্দেশনা পালন করে। করোনা মহামারি শুরু থেকে আজ মাসঅধিক পর্যন্ত দিনে ত্রান তৈরী প্রক্রিয়া, রাতে বিতরন প্রক্রিয়া চলছে। আমি সেদিন রাতে জানলাম,অনুভব করলাম সকল কাজটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষন/পরিচালিত হয়েছে। 

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here