ঈদ নিয়ে সবচেয়ে সার্থক উক্তিটি নিশ্চয় আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের। আজকের দিনে সব ভেদাভেদ ভুলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে কবি বলেছেন, ‘ভুলে যা তুই দোস্ত-দুশমন, হাত মেলা হাতে।’ তাই আজ বন্দরনগরী চট্টগ্রামের প্রধান ঈদ জামাতে সব ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হন রাজনীতিবিদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
রাজনৈতিক কারণে সারা বছর যাদের মুখ দেখাদেখি বন্ধ, সভা-সমাবেশে বক্তব্যে যার নামে চলে নিত্য বিষদগার। আজ সেই মানুষগুলো একে অপরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেজদায় অবনত হয়েছেন। নামাজ শেষে কোলাকুলিতে ভেঙেছে সারা বছরের ভেদ। সকাল থেকে আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে ঈদের জামাতে নামে মুসল্লিদের ঢল।
নগরীর সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতটি অনুষ্ঠিত হয়েছে জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে বুধবার (৫ জুন) সকাল ৮টায়। এখানে ঈদের নামাজে শরিক হয়েছিলেন লাখো মুসল্লি। নামাজে ইমামতি করেন ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসা চট্টগ্রামের মুহাদ্দিছ আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরি। একই স্থানে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় ঈদ জামাত।
প্রথম জামাতে নামাজ আদায়ে এক কাতারে শরিক হন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতারা। ছিলেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরাও। মুসল্লি হয়ে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রামের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মীর মো. নাসির উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাবেক মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। নামাজ শেষে তারা পরস্পর কোলাকুলির মধ্য দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এর আগে ঈদের নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহের শান্তি কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করেন সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন আল কাদেরি।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নগরের আউটার স্টেডিয়ামে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ আদায় করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান, জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।
এবার নগরীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ১৬৪টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ঈদ জামাত কমিটির তত্ত্বাবধানে আরও ৯৪টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।